🎁 CREATE YOUR CUSTOMIZE GIFT BOX

৳ 0
0

Home

Account

WhatsApp

blog post bangla 290525 The Sunnah Storehttps://www.thesunnahstore.co.uk/wp-content/uploads/2024/03/img-placeholder-jpg.webp" alt="image">
Mohaimin

May 31, 2025

Share

কুরবানির ইতিহাস।

 

কুরবানি… আমরা যখন এই শব্দটা উচ্চারণ করি, তখন শুধু একটা পশু জবাই করার কথা মনে আসে। না, কুরবানি এর থেকেও অনেক গভীর, অনেক মহিমান্বিত কিছু। এটা শুধু একটি ইবাদত নয়, এটা ত্যাগের ইবাদত, যা মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই চলে আসছে।

 

প্রথম কুরবানি কারা করেছিলেন? হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র, হাবিল আর কাবিল। পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাদের গল্প বলেন: “আদমের পুত্রদ্বয়ের সংবাদ তুমি তাদেরকে যথাযথভাবে শুনিয়ে দাও; যখন তারা উভয়ে কুরবানি পেশ করল, তখন একজনের কুরবানি কবুল হলো, আর অন্যজনের কবুল হলো না।” হাবিল আল্লাহকে খুশি করার জন্য তার পালের সেরা দুম্বাটা কোরবানি করলেন, বিশুদ্ধ নিয়তে। \

আল্লাহ তা কবুল করলেন। কিন্তু কাবিল তার ফসলের নিকৃষ্ট অংশটা দিল, তার নিয়তে কোনো ঘাটতি ছিল। আল্লাহ সেটা কবুল করলেন না। এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, কুরবানি শুধু জিনিস দেওয়া নয়, এটা নিয়তের পবিত্রতা। আমাদের কুরবানি একমাত্র আল্লাহর জন্য।  এটা হলো আল্লাহর কাছে আপনার হৃদয়ের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা নিবেদন। আল্লাহ সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতে বলেন: “এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া পৌঁছে থাকে।”

 

আমাদের এই প্রজন্মের কুরবানি, ঈদুল আযহায় আমরা যা করি, তার মূল ভিত্তি হলো হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সেই অবিস্মরণীয় ঘটনা। আল্লাহ তায়ালা ইবরাহীম (আ.)-কে স্বপ্নে নির্দেশ দিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কুরবানি করার জন্য। নবীদের স্বপ্ন যেহেতু ওহী বা ঐশী নির্দেশনা, তাই ইবরাহীম (আ.) বুঝলেন, তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হলেন তাঁর নিজ হাতে গড়া, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাওয়া সন্তান – ইসমাঈল (আ.)। কুরআনে এই ঘটনা সূরা সাফফাতের ১০২ থেকে ১০৭ নম্বর আয়াতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইবরাহীম (আ.) ইসমাঈল (আ.)-কে যখন এই নির্দেশনার কথা বললেন, ইসমাঈল (আ.)-এর জবাব ছিল, “হে আমার পিতা! আপনাকে যা নির্দেশ করা হয়েছে, তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।” (সূরা সাফফাত, ৩৭:১০২)।

 

এই চরম পরীক্ষার মুহূর্তে, যখন ইবরাহীম (আ.) তাঁর ছেলেকে কুরবানি করার জন্য ছুরি চালাতেই যাচ্ছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর অপার কুদরতে ঠিক সেই মুহূর্তেই ইসমাঈল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “এবং আমি তার পরিবর্তে যবেহ করার জন্য এক বিরাট পশু দিলাম।” (সূরা সাফফাত, ৩৭:১০৭)। আল্লাহ শুধু এটা দেখতে চেয়েছিলেন – আপনার ভালোবাসা কতটা শর্তহীন।

 

এই ঘটনাই আমাদের জন্য কুরবানিকে একটি সুন্নাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছরই কুরবানি করেছেন। (তিরমিজি)। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কুরবানির দিন পশু কুরবানির চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। কিয়ামতের দিন জবেহ করা পশুকে তার শিং, লোম ও খুরসহ হাজির করা হবে। কুরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। আরও এসেছে, কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ)। এটা নিছকই একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা আমাদের নিজেদেরকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করার, আমাদের সবচাইতে প্রিয় জিনিসটা আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেওয়ার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এই কারণেই একে ‘সুন্নতে ইবরাহীমী’ বলা হয়।

 

কুরবানির ফজিলত ও তাৎপর্য

 

১. আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তাকওয়ার প্রমাণ: কুরবানির মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আমরা যে পশু জবেহ করি, তার গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। কী পৌঁছায় তাহলে? আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তোমাদের অন্তরের তাকওয়া পৌঁছে থাকে।” (সূরা হজ, আয়াত: ৩৭)। এর মানে হলো, আপনার ভেতরের আল্লাহভীতি, আপনার নিষ্ঠা, আপনার একাগ্রতাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। কুরবানির মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করি যে, আল্লাহর নির্দেশের সামনে আমাদের কাছে কোনো কিছুই প্রিয় নয়, এমনকি আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বা আমাদের আকাঙ্ক্ষাও নয়।

২. সর্বোত্তম আমল ও গুনাহ মাফ: ঈদের দিনে কুরবানি করা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমলগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দিনটিকে ইবাদতের শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “কুরবানির দিন পশু কুরবানির চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। কিয়ামতের দিন জবেহ করা পশুকে তার শিং, লোম ও খুরসহ হাজির করা হবে। কুরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)। একটু ভাবুন তো, আল্লাহর কাছে কতটা প্রিয় হলে তিনি রক্তের প্রথম ফোঁটা জমিনে পড়ার আগেই কবুল করে নেন! শুধু তাই নয়, হাদীসে আরও এসেছে, কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ)। এটা আমাদের গুনাহ মাফের এক অসাধারণ সুযোগ। কে চায় না তার গুনাহগুলো মাফ হোক?

৩. ইবরাহীমী সুন্নাহর পুনরুজ্জীবন: কুরবানি মানে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সেই অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের স্মৃতিচারণ। আমরা যখন কুরবানি করি, তখন আসলে আমরা তাঁর সেই সুমহান আনুগত্য এবং আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসাকে পুনরুজ্জীবিত করি। এটা শুধু একটা রিচুয়াল নয়, মুসলিমদের জন্য আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য এবং চরম ত্যাগের শিক্ষাকে ধারণ করে। যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আল্লাহ যখন কিছু চান, তখন আমাদের জীবনের সবচাইতে প্রিয় জিনিসও তাঁর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

৪. সামাজিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন: কুরবানির গোশত বিতরণের যে বিধান, তা মুসলিম সমাজের জন্য এক বিরাট কল্যাণ বয়ে আনে। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, এই গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করতে – একভাগ নিজের জন্য, একভাগ আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর জন্য, আর একভাগ দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য। এর মাধ্যমে সমাজের বিত্তহীন মানুষরাও ঈদের আনন্দ ও উন্নত খাবার উপভোগ করতে পারে। এটা শুধু খাবার ভাগ করে দেওয়া নয়, এটা হলো সামাজিক সম্প্রীতি, সহমর্মিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করা। ধনী-গরিবের মধ্যে ভালোবাসার এক সেতুবন্ধন তৈরি করে, যেখানে সবাই এক সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে।

 

কাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব?

 

কোনো ব্যক্তি এর শর্তগুলো পূরণ করার পরও কুরবানি না করে, তবে সে গুনাহগার হবে। নিম্নোক্ত শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মুসলিমের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়:

১. মুসলিম হওয়া: কুরবানি কেবল মুসলিমদের ওপরই ওয়াজিব। অমুসলিমদের ওপর এটি প্রযোজ্য নয়, কারণ এটি একটি সুনির্দিষ্ট ইসলামী ইবাদত।

২. প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া: কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। নাবালেগ (অপ্রাপ্তবয়স্ক) বা পাগল ব্যক্তির ওপর ব্যক্তিগতভাবে কুরবানি ওয়াজিব হয় না। তবে, যদি কোনো অভিভাবক চান, তারা তাদের পক্ষ থেকে নফল হিসেবে কুরবানি দিতে পারেন। এটি সাবালকত্ব ও সুস্থ বিবেচনাবোধের সাথে জড়িত একটি দায়িত্ব।

৩. মুকিম হওয়া: ব্যক্তিকে মুকিম হতে হবে, অর্থাৎ নিজ শহরে বা স্থায়ী নিবাসে অবস্থানকারী। শরীয়তের দৃষ্টিতে যারা মুসাফির (নির্দিষ্ট দূরত্বে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হওয়া), তাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। যদি কেউ কুরবানির নির্ধারিত সময়ে (১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত) সফরের অবস্থায় থাকেন, তাহলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না। তবে সফর থেকে ফিরে যদি তিনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, তাহলে তার উপর ওয়াজিব হবে।

৪. নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া: এটি কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কুরবানির দিনগুলোতে (১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত, অর্থাৎ তিন দিনের মধ্যে) ব্যক্তির কাছে তার মৌলিক প্রয়োজন (যেমন – বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র) পূরণের পর সাড়ে ৫২ তোলা রূপার মূল্য (প্রায় ৬১২.৩৬ গ্রাম রূপা) অথবা তার সমপরিমাণ সম্পদ অতিরিক্ত থাকতে হবে। এই সম্পদ নগদ অর্থ, সোনা, রূপা, ব্যবসার পণ্য, অপ্রয়োজনীয় জমি বা বাড়ি, ব্যবহৃত স্বর্ণ-রূপা, শেয়ার, বন্ড বা অন্য যেকোনো রূপের হতে পারে, যা তার নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর অতিরিক্ত। এক্ষেত্রে সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা জরুরি নয়, বরং কুরবানির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেই তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। এটি যাকাতের নেসাবের মতোই, তবে যাকাতের মতো এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়।

 

গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসআলা হলো: পরিবারের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সদস্যের ওপর পৃথকভাবে কুরবানি ওয়াজিব হয়। এটি শুধুমাত্র গৃহকর্তার ওপর বর্তায় না। উদাহরণস্বরূপ, যদি পরিবারের কোনো নারীর ব্যক্তিগত গহনা, যা তিনি ব্যবহার করেন না বা করেন, কিন্তু তার মূল্য নেসাব পরিমাণ হয়, তবে তার ওপরও আলাদাভাবে কুরবানি ওয়াজিব হবে, এমনকি যদি তিনি তা কখনো ব্যবহার নাও করে থাকেন। একইভাবে, পরিবারের অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য, যার নিজস্ব সম্পদ নেসাব পরিমাণ, তার ওপরও কুরবানি ওয়াজিব।

 

Related Posts