🎁 CREATE YOUR CUSTOMIZE GIFT BOX

৳ 0
0

Home

Account

WhatsApp

blog post bangla 030625 The Sunnah Storehttps://www.thesunnahstore.co.uk/wp-content/uploads/2024/03/img-placeholder-jpg.webp" alt="image">
Hamza

June 3, 2025

Share

প্রশান্তি কি শুধু নিছক সহাবস্থানের মধ্যে নিহিত?

 

“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এটিও যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে জুড়ি সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মধ্যে প্রশান্তি খুঁজে পাও; আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।” (সূরা রুম: ২১)

এই আয়াতে উল্লেখিত প্রশান্তি কি শুধু নিছক সহাবস্থানের মধ্যে নিহিত? মোটেও না। এই প্রশান্তি অনুভবের জন্য মুসলিম দম্পতিদের উচিত যতটা সম্ভব একসাথে সময় কাটানো। মজবুত সম্পর্ক গড়ার জন্য, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও দয়া বিকাশের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনই এর সর্বোত্তম উদাহরণ। তিনি এক বিশাল দায়িত্ব ও গুরুতর মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। উম্মাহর নেতৃত্ব, ইসলামের প্রচার—কত কঠিন কাজ! অথচ এই ব্যস্ততার মাঝেও তিনি তাঁর স্ত্রীদের সাথে খেলাধুলা করতেন ও মজা করতেন। তাঁর জীবন প্রমাণ করে, দায়িত্ব আর ভালোবাসার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।

আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন: “একবার আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছিলাম এবং আমি তাঁকে পেছনে ফেলে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে যখন আমার শরীর কিছুটা ভারী হয়ে গেল, তখন আবার আমি তাঁর সাথে প্রতিযোগিতা করলাম এবং তিনি আমাকে পেছনে ফেলে দিলেন। তিনি বললেন: ‘এটা সেই (আগের) প্রতিযোগিতার প্রতিশোধ।'” (সুনানে আবি দাউদ ২৫৭৮, গ্রেড: সহিহ – আল-আলবানি)

এই হাদিসটি কী দারুণভাবে আমাদের দেখায় যে, নবীজি (সা.) আর তাঁর স্ত্রীগণ কত সুন্দর সময় কাটাতেন! এটা কেবল একটা প্রতিযোগিতা ছিল না, ছিল গভীর ভালোবাসা, হাস্যরস আর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের এক চমৎকার প্রকাশ। দাম্পত্য জীবনে শুধু গুরুতর বিষয়ে আলোচনা করলেই হয় না, বরং একসাথে হাসি-ঠাট্টা, খেলাধুলা আর ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করাও ইবাদতের অংশ। যখন সম্পর্কগুলো এমন হয়, তখনই সত্যিকারের প্রশান্তি আসে, যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য চেয়েছেন।

দাম্পত্য জীবনে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরও মধুর করতে কিছু আইডিয়া নিচে দেওয়া হলো:

১.ঘুরতে যান: কাছের কোনো পার্ক, বাগান বা চিড়িয়াখানায় যান এবং একসাথে প্রকৃতি উপভোগ করুন। এই ভ্রমণ আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে করুন। প্রকৃতির প্রতিটি সুন্দর দৃশ্য ও শব্দে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করুন। আল্লাহর সৃষ্টি, তার সূক্ষ্মতা, তার কারুকার্য নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করুন। দেখুন, তাকিয়ে থাকুন, ভাবুন এবং আপনার সঙ্গীর সাথে আলোচনা করুন। এই ভ্রমণটি যেন আপনার ঈমান বৃদ্ধি করে এবং আপনাকে আল্লাহর প্রতি বিস্মিত করে তোলে।

২. বৃষ্টি বিলাস: একসাথে আল্লাহর দান বৃষ্টি উপভোগ করুন এবং এর জন্য আল্লাহকে অশেষ শুকরিয়া আদায় করুন।

৩. একসাথে রান্না: সঙ্গীর সাথে রান্না করাটা খুব মজার হতে পারে। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনেই রান্নায় আগ্রহী হন, তাহলে এটি একটি দারুণ আইডিয়া হতে পারে। এমনকি স্বামী যদি রান্নায় খুব বেশি আগ্রহী নাও হন, তবুও মাঝে মাঝে মজার জন্য বা নতুন কিছু চেষ্টা করার জন্য রান্না করা উচিত। একসাথে বেকিং, গ্রিলিং বা রোস্টিং করাটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

৪. ইসলামিক কুইজ খেলা: একটি ইসলামিক বই বেছে নিন, সব থেকে ভালো হয় কোনো ছোট বই। দুজনেই পড়া শেষ হলে একে অপরের জন্য কুইজ তৈরি করুন। এটাকে একটি প্রতিযোগিতার মতো করুন এবং বিজয়ীর জন্য একটি পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন।

৫. “আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি” খেলা: স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পালা করে বলুন “আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি কারণ…” এবং একটি বাস্তব কারণ উল্লেখ করুন। যে আগে কারণ শেষ করে ফেলবে সে হেরে যাবে। প্রতিটি দম্পতির মাসে অন্তত একবার এই খেলাটি খেলা উচিত। এটি আপনার ভালোবাসা প্রকাশের একটি সুন্দর উপায়, এটি আপনার সঙ্গীকে জানায় যে আপনি কী প্রশংসা করেন, এবং কী আপনাকে মুগ্ধ করে। এর আরেকটি ভিন্ন রূপ হলো “আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ কারণ…”

৬. সুখের স্মৃতি ভাগাভাগি: অবসর সময়ে একসাথে বসে আপনাদের সুখের স্মৃতিগুলো মনে করুন। এটি আপনাদের মধ্যে ভালোবাসা জাগিয়ে তুলবে এবং আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা আপনার হৃদয়ে গেঁথে দেবে।

৭. শারীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন গেম খেলুন: যেমন আনস্ক্র্যাম্বল (শব্দ সাজানো), ওয়ার্ড সার্চ (শব্দ খোঁজা), ধাঁধা ইত্যাদি খেলুন।

৮. ভালো কাজের প্রতিযোগিতা: একে অপরকে ভালো কাজ করার জন্য চ্যালেঞ্জ করুন। বলা হয় যে একটি অভ্যাস তৈরি হতে ২১ দিন লাগে। একটি সুন্নাহ বেছে নিন এবং একে অপরকে ২১ দিন একটানা সেটি পালনের চ্যালেঞ্জ দিন। বিজয়ীর জন্য একটি পুরস্কার ঠিক করুন।

৯. একসাথে অনলাইন অ্যাক্টিভিটি: নিজেরা আলাদাভাবে ফোনে মগ্ন না হয়ে বা একে অপরের পাশে থেকেও ভিন্ন জগতে না থেকে, আপনাদের অনলাইন কার্যকলাপগুলো একসাথে করুন। হোয়াটসঅ্যাপে মজার যে ভিডিওগুলো পান, সেগুলো সঙ্গীর ফোনে ফরোয়ার্ড না করে একসাথে দেখুন। একসাথে ইসলামিক লেকচার দেখুন এবং সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করুন। কী শিখলেন, কী বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে আপনাদের চিন্তা ও ভাবনাগুলো নিয়ে কথা বলুন।

১০. উপহার কিনতে যান: পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের জন্য উপহার কিনতে যান। কোনো উপলক্ষ না থাকলেও, কেনাকাটার জন্য যান, আনন্দ করুন, তাদের চমকে দিন এবং আপনাদের সম্পর্কগুলোকে সতেজ করুন। আর হ্যাঁ, একে অপরের জন্যও কিছু কিনুন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা একে অপরকে উপহার দাও, তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়বে।” (আল আদাব আল মুফরাদ): হাসান (আল-আলবানি) (আল আদাব আল মুফরাদ, বই ৩০, হাদিস ৫৭)

১১. একসাথে দৌড়ান: হ্যাঁ, একে অপরের সাথে দৌড়ান। এটা সুন্নাহ। যদি দৌড়াতে না পারেন, তাহলে হাঁটার প্রতিযোগিতা করুন।

আশা করি উপরের ধারণাগুলো আপনাদের সাহায্য করবে এবং আপনার সঙ্গীর সাথে এবং ফলস্বরূপ আল্লাহর (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) সাথেও আপনাদের বন্ধনকে শক্তিশালী করবে। মনে রাখবেন, সত্যিকারের ভালোবাসা কেবল তখনই সম্ভব যখন তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়। আল্লাহর ওয়াস্তে একে অপরকে ভালোবাসুন, ইনশাআল্লাহ, তিনি আপনাদের দুজনকে জান্নাতে একত্রিত করবেন।

 

Related Posts